একটা জাতির গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো তরুণ প্রজন্ম। তরুণরা হলো জাতি উন্নত গঠনের হাতিয়ার। এই তরুণদের উপর নির্ভর করে একটা জাতির ভবিষ্যত পরিণতি। একটা জাতিকে গঠন বা ধ্বংস করার জন্য এই তরুণরাই যথেষ্ট।
ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মূলত তরুণদের হাত ধরেই কিন্তু বর্তমান সমাজে তরুণ প্রজন্ম এর অবস্থা খুবই শোচনীয়। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে যেয়ে তরুণরা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য এবং স্বকিয়তা বিসর্জন দিচ্ছে, ধর্মীয় শিক্ষার অভাব, সঠিক পারিবারিক শিক্ষার অভাব, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, ব্যাভিচার, সেকুলারিজম বিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে এগোচ্ছে এই প্রজন্ম। আর তাদের বিশ্বাস এগুলো মেনে চলার নামই নাকি আধুনিকতা। ভাবা যায়! কতবড় ভুলের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে এই তরুণরা। তাদের এই অধঃপতনের জন্য দায়ী পুরো সমাজব্যবস্থাটাই। কিন্তু এভাবে তো একটা জাতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে না। সময় থাকতেই তরুণ সমাজকে আলোর পথে নিয়ে আসতে হবে, তাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে হবে।
একটা শিশুর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র হলো তার পরিবার। আর এই পরিবার থেকে প্রাপ্ত ধর্মীয় শিক্ষা তার জীবনে অভাবনীয় প্রভাব ফেলে। ছোট থেকেই বুকে টেনে নিয়ে তাদেরকে বোঝাতে হবে আলো আধারের এই রঙিন দুনিয়ায় আমাদের শেষ জীবন নয়, এটা শুধুমাত্র একটা পরীক্ষাকেন্দ্র। সৃষ্টির শুরু থেকে আজ অবধি কেউ বেচেঁ নেই। সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। আর মৃত্যুর পরেই আমাদের অনন্তকালের জীবন শুরু হবে যে জীবনের কোনো শেষ নেই। এই সত্য কেউ কোনোদিনও প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না। এই পৃথিবীতে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর গোলামি করার জন্যই আমাদেরকে পাঠিয়েছেন। মহান আল্লাহর কাছে এই পৃথিবীর কোনো মূল্য নেই। খুবই তুচ্ছ এই দুনিয়া। আর এই শিক্ষা তার সারাজীবনে প্রভাব ফেলানোর জন্য বেশি বেশি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
ধীরে ধীরে কিশোর পেরিয়ে যখন যৌবনে পা দিবে তখন তাকে জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি করাতে হবে। যৌবন আল্লাহর দেওয়া এক মহান নেয়ামত।যৌবন বয়সে একজন মানুষ তার ভালোমন্দ বুঝতে শিখে। যৌবন বয়সের ইবাদত বৃদ্ধ বয়সের থেকে হাজার গুনে উত্তম। এই যৌবনে করা ইবাদত এর কারণেই মহান আল্লাহ হাশরের ময়দানে আশ্রয় দিবেন। বিশ্বনবী রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুবকদের হাতে অনেক বড় বড় দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। এমনকি বদর, উহুদ, খন্দক, হুনাইন এর মত বড় বড় যুদ্ধে যুবকসম্প্রদায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এছাড়াও ভাষা আন্দোলনসহ মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করার পেছনে যুবকদের ভূমিকা অপরিসীম।
যুবকদের মধ্যে ইসলামিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। বর্তমানে তরুণদের এক অংশ পশ্চিমা সংস্কৃতি লালন করতে যেয়ে নিজের ব্যাক্তিত্ব বিসর্জন দিচ্ছে। যার ফলে তারা বিভিন্ন নেশাদ্রব্য পান করা, পর্ণগ্রাফি আসক্তি, গানবাজনাসহ বিভিন্ন ইসলামবিরোধী কাজে লিপ্ত। যে কারণে নিজের ধর্ম কর্মভুলে গিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত। আর এই হতাশা থেকে বাঁচতে যেয়ে সুইসাইড করে মূল্যবান জীবনটাকে জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছে। নিজের হায়া বিসর্জন দিয়ে নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে। বড়দের শ্রদ্ধা, ছোটদের স্নেহ এবং সমবয়সীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ এর কথা ভুলে যেয়ে নিজের অহমিকা প্রকাশে ব্যাস্ত। মানবিক মূল্যবোধের এতটাই অধঃপতন হয়েছে যে এখন মা বোনেরা যেখানে সেখানে ধর্ষিত হচ্ছে। আধুনিকতার নামে ছেলে মেয়েরা উচ্ছৃঙ্খল ভাবে চলাফেরা করছে। পিতামাতার খেদমতের মাধ্যমে জান্নাত পাওয়া যাবে অথচ শেষ বয়সে এই পরম যত্নের মা-বাবার ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম। মূলকথা হলো আধুনিক সমাজ ধর্মকে ব্যক্তিগত বিষয় বানিয়ে ফেলতেছে অথচ আমাদের পুরো জীবনব্যবস্থাটাই হলো ধর্ম। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ের পরিপূর্ণ সলিউশন হলো ইসলামের বিধিবিধান। এই আসল শিক্ষা থেকেই যুবকরা বঞ্চিত হচ্ছে। তাদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে ইসলামের আলোয় আলোকিত করে পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সাম্নের দিকে। ভাল থাকুক আমাদের এই পৃথিবী, ভাল থাকুক তরুণ প্রজন্ম ।
লিখেছেনঃ মুনমুন নাহার সুমা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
আরো পড়ুনঃ রাশিফল একটা ফাইযলামি
Follow us on Facebook.