প্রবাসীদের মর্যাদা দিতে শিখুন
যে মানুষটা আমাদের দেশ থেকে সাধারণ নাগরিক সুবিধা নিচ্ছে না বললেই চলে অথচ এই নিম্নআয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীলদেশে রুপান্তরে যার অবদান অনেক বেশী তাকে আমরা কিভাবে দেখি? এভাবেই কি দেখা উচিৎ? প্রবাসীদের সাথে তার পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কি ব্যবহার করে সেটা কি আমরা কখনো ভেবেছি? অথচ ভাবা উচিৎ ছিল।
আনুমানিক প্রায় ২ কোটি বাংলাদেশী প্রবাসী আছে বিশ্বের আনাচে-কানাচে। আর এই প্রবাসীদের বেশিরভাগই সল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এয়ারপোর্টে প্রায়ই দেখি তারা যখন দেশে আসে সামান্য নাম, ঠিকানা যে ফর্মে লিখতে হয় সেটা লেখার জন্যও তারা কোন আন্সার এর কাছে যায় বা এমন কোন ব্যক্তি যাকে তার কাছে শিক্ষিত বলে মনে হয় তাকে গিয়ে অনুরোধ করে। সারাবিশ্বেই আমাদের এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা ছড়িয়ে থাকলেও বেশীর ভাগই থাকে মধ্যপ্রাচ্চের মরুভুমিতে। মাথায় উত্তপ্ত সূর্য আর পায়ের নিচে গরম বালুর নিয়ে এরা কাজ করে যায় দিনরাত্রি। আপনার কাছে অবাক লাগবে শুনে যে, মধ্যপ্রাচ্চের দেশগুলোতে সরকার নিয়ম করে দেয় যেন সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত কেউ বাইরে কাজ না করে। অর্থাৎ, গরমের মৌসুমে তখন রোদের তীব্রতা এতই বেশী থাকে যে, সরকারকেই ইন্টারফেয়ার করতে হয়।
মহামারি এই করোনাতে যখন সারা বিশ্বের অর্থনীতি নিম্নমুখী ঠিক তখনও থেমে নেই আমাদের এই প্রবাসীদের যুদ্ধ। এই কোরবানি উপলক্ষে শুধুমাত্র জুলাই মাসের প্রথম ১৫ দিনেই তারা ১০ হাজার ৭০০ কোটির থেকেও বেশী টাকা দেশে পাঠিয়েছে বলে পররাস্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। প্রতিবার ঈদ এলেই যেন টাকা পাঠানোর রেকর্ড করে এই প্রবাসী বন্ধুরা। সরকারকে এক্ষেত্রে ধন্যবাদ দিতে হয় যে, এখন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা পাঠালে ২% ইনসেন্টিভ দেওয়া হয়। এতে করে অন্যায়ভাবে হুন্ডির মাধ্যমে না পাঠিয়ে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর প্রবনতা অনেক বেড়েছে।
তবে সামগ্রিকভাবে এই প্রবাসীদেরকে আমরা সম্মান দিতে পারছি কি? এক কথায় উত্তর হল না। প্রবাসীদের অধিকাংশ সল্পশিক্ষিত হওয়াতে সামান্য পাসপোর্ট করতেই তাদেরকে দালাল ধরতে হয়। ঘুষের টাকা ছাড়া এখনো পাসপোর্ট দ্রুত দেওয়া হয় না, ই-পাসপোর্ট এর ওয়েবসাইটে যা লেখা আছে সেগুলো পূরণ করার পরেও তাদের পাসপোর্ট ইস্যু করতে চায় না পাসপোর্ট অফিসগুলো। ভিসা, এয়ার টিকেট, করোনা টেস্টসহ সবকিছুর জন্যই ধরতে হয় দালাল, দিতে হয় অধিক টাকা। আপনাদের কি মনে আছে সেই ইতালি প্রবাসীর কথা, আই ফাঁক ইউর সিস্টেম? কথাটা কি শুধুশুধু বলছিল সে? না, একদমই না।
গ্রামে একটা কথা আছে, স্বামী বিদেশ। তারমানে বুঝতেই পারছেন যে লোক বিদেশে থাকে তার স্ত্রীকে কিভাবে দেখা হয়। আর তার স্ত্রীও বেশিরভাগ সময়ই পরকীয়াতে জড়িয়ে পরে। যে লোক তার খাবারের ব্যবস্থা করছে, তাকে সামাজিক সম্মান দিচ্ছে, নিরাপত্তা দিচ্ছে, আশ্রয় দিচ্ছে তার সাথেই বেইমানী করছে এ দেশের বহু স্ত্রী। আর সবশেষে প্রবাসীর পাঠানো টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে প্রেমিকের হাত ধরে। আর পরিবারের ভাই-বোন কেন অনেক সময় পিতা-মাতাও তাকে দেখে টাকা তৈরির কারখানা/মেশিন হিসেবে। ভাইএর খবর নেয়ার আগে জিজ্ঞেস করে টাকা কবে পাঠাবে। আর যদি সেই প্রবাসী বিদেশের মাটিতেই মারা যায় তবে তার লাশ দেশে আনার টাকাটাও তারা খরচ করতে নারাজ থাকে। অবস্থার বিপরতি চিত্র যে নেই সেটা বলছি না তবে বেশিরভাগই এমনটা ঘটে।
সরকারকে ধন্যবাদ যে, তারা বেশ ভাল কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে প্রবাসীদের কল্যাণে। তবে এখনো অনেক বাকি। প্রবাসীদের কথা শোনার মত মানসিকতা তৈরি করতে হবে সরকারকে। প্রবাসীদের যখন বাইরে পাঠানো হয় তখন তাদেরকে ট্রেনিং দিয়ে কোন কাজের যোগ্য করে তবেই পাঠানো উচিৎ। ভাষা খুব বড় একটা নিয়ামক এখত্রে। সরকারের উচিৎ বিদেশ গমনে ইচ্ছুক জনগণকে ফ্রী বা সল্পমূলে ভাষা শেখানো যাতে করে বিদশের মাটিতে প্রবাসীরা খুব দ্রুততার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এর পর দেখা যায় অনেক শ্রমিক বিদেশে কাজ করার সময় অঙ্গহানি করে দেশে ফিরে। এদেরকে উপযুক্ত ট্রেনিং দিয়ে অন্য কোন কাজে লাগানো যেতে পারে। কেউ মারা গেলে সরকারের উচিৎ দায়িত্ব নিয়ে লাশ দেশে নিয়ে আশা এবং তার পরিবারকে এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। এগুলো করা গেলে আশা করি আমাদের প্রবাসীরা অনেকটাই স্বস্তি পাবে আর সাথে সাথে আমাদের আর্থিক প্রগতিও জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে কেননা এখন পর্যন্ত আমাদের বেশিরভাগ প্রবাসীই শ্রমিক, তাদেরকে দক্ষ করে তোলা হলে তারা আরো বেশী রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।
ইদানিং বেশ কিছু সরকারী অফিসার বেশ ভাল ভাল কাজ করছেন প্রবাসীদের জন্য। তাদেরকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। যেমন এই কয়েক দিন আগেই প্রবাসী এক ভাইএর আইফোন হারিয়ে গেলে তিনি নিজ উদ্যোগে সেটা খুজে বের করে দেন। আর এখন প্রবাসীদের লাগেজ থেকে বিভিন্ন দামী বস্তু খুব কমই চুরি হচ্ছে। এগুলো খুবই ভাল দৃশ্য। তবে আরো বেশী সদয় হতে হবে আমাদেরকে, আমাদের পরিবারগুলোকে, আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে। সম্মান দিতে হবে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদেরকে। এয়ারপোর্টে তাদের ভোগান্তি দূর করতে হবে। তাদের বিদেশ গমন সহজ করতে হবে। দালাল ভিত্তিক পাসপোর্ট বন্ধ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ সরকারের তৈরি সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপগুলো
২০২২ সালে বাংলাদেশের জন্য ৫টি বিজনেজ আইডিয়া
রেমিট্যান্স ফাইটার ❤️
Good article
They deserve more respect than we show.
Real fighter
Show respect to remittance fighters..they are our savers.